আওয়ামীলীগ এখন আর ফ্যাসিবাদের মধ্যে নেই, তারা এখন মাফিয়া সরকার !
অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেটের মধ্যে একটি আসন ছেড়ে দিয়ে আওয়ামীলীগ সবাইকে এটা বুঝাতে চাইবে যে, নির্বাচন কমিশন সঠিক ট্রাকে আছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে বলেই বিপক্ষ শক্তি জিততে পারছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আওয়ামীলীগ এটা কাকে দেখাতে চাইছে? হু হ্যাভ বলস? মানে আওয়ামীলীককে দেখাতে হবে এমন কোন পক্ষ আছে?
আওয়ামীলীগ এখন আর ফ্যাসিবাদের মধ্যে নেই। তারা এখন মাফিয়া সরকারে পরিণত হয়েছে। আওয়ামীলীগ এখন একটি মাফিয়া শক্তি। দেশের সর্বত্র একক ক্ষমতাসম্পন্ন দল হিসেবে এরা প্রতিটা সেক্টরে একেকটা গডফাদার ভিত্তিক সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। দেশে এবং দেশের বাইরে এমন বিচি সম্পন্ন কেউই নেই যাকে তাঁদের দেখাতে হবে যে- দেখো নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে। যারা “সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে কিনা?” জিজ্ঞেস করতে পারে, তাঁদের কাছ থেকে মেন্ডেট নিয়েই আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসেছে। বিনিময়ে তারা আপনাদেরকে শাহবাগে বিরানী খাইয়েছে, মোমবাতি জ্বালিয়ে নান্দনিক ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি তোলার সুযোগ করে দিয়েছে যার একটা ঐতিহাসিক ভ্যাল্যুও দশ বিশ বছর পরে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দাঁড়ি-টুপি-পাঞ্জাবী পরা কতগুলো লোকের ফাঁসি দেওয়া লাশও আপনারা পেয়েছেন। এগুলোর বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগণ নিজেরাই আওয়ামীলীগের হাতে মাফিয়াতন্ত্রের একচ্ছত্র অধিকার তুলে দিয়েছে।
কবিগুরু বলেছিলেন ” অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখিতে যাইবার মতো এমন বিড়ম্বনা আর নাই”। কিন্তু অধিকার ছেড়ে দেয়ার পরে আবার ফিরে পাওয়ার বিষয়টা কুটুমতন্ত্রের ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা বটে- কিন্তু জাতীয় এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে এটা বিড়ম্বনা নয় বরং স্বত্ব ত্যাগ করে দাসত্ব গ্রহণ বৈ অন্য কিছু নয়। আবেগের বশবর্তী হয়ে বাঙালী চেতনাবাদকে যখন গ্রহণ করে নিলো তখন মূলত কয়েকটা ব্যাপার ঘটেছে। প্রথমত, জাতিসত্তার মৌলিক ভিত্তি হিসেবে ঘৃণাবাদ গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে ছোটলোক জাতির কাতারে নাম লেখানো হয়েছে। দ্বিতীয়ত, চেতনাবাদের ফিল্টারকে গ্রহণের মাধ্যমে নিঃশর্ত ও নিঃস্বার্থ দাসত্বের বিনিময়ে স্বত্ব বিসর্জন ঘটেছে। তৃতীয়ত, সেক্যুলার এলিট শ্রেণীর (যেটা মূলত কিছু মিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, বিনোদনকর্মী ও রাজনীতিবিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি অতি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী) তৈরি করা স্ট্যাটাস কো বাংলাদেশের মানুষের ধর্ম ও ইমানের জায়গাটিতে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
সুতরাং, সব মিলে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ সমীকরণে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে। ছোটলোকি, দাসসুলভ আচরণ ও ধর্মের প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এক অস্বাভাবিক মেরুকরণ ঘটেছে। এই মেরুকরণ দেশের মানুষকে একটা এসপার-ওসপার সিচুয়েশনে ফেলে দিয়েছে। হয় এ প্রান্ত নয় ও প্রান্ত- এহেন একটি তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল, প্রান্তিক ও সেক্যুলার-মৌলবাদী অবস্থানে এখন বাংলাদেশ। এই সেক্যুলার-মৌলবাদের ফ্রেমে শুদ্ধ হতে হলে ব্যক্তির ধর্ম, মতামত, অধিকার, দাবি-দাওয়া, কথা-বার্তা, শিক্ষা-দীক্ষা ও রাজনৈতিক দর্শন…সকল কিছুই এই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর তৈরি স্ট্যাটাস-কোর মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি অর্জন করেই আসতে হবে। অন্যথা কেউই তাঁর মৌলিক অধিকার পাওয়া তো দুরের কথা- বাংলাদেশে একজন নাগরিক হিসেবেও জীবন যাপন করার সুযোগ পাবে না। যুগে যুগে পৃথিবী যে ধর্মান্ধতা দেখেছে, সেক্যুলার-মৌলবাদ তার চাইতে হাজার গুণে জঘন্য। সুতরাং ব্যক্তি স্বাধীনতা, স্বাধীন মতামত ও জীবন দর্শন- সবই এখানে সেন্সর্ড, নিয়ন্ত্রিত ও সুবিধাভোগীদের জন্য সংরক্ষিত।
অন্যদিকে, পশ্চিমা বিশ্বের মধ্য হতে মাঝে মধ্যে যে সুষ্ঠু নির্বাচনের আহবান শোনা যায় সেটাও যে ফাঁকাবুলি তা আওয়ামীলীগ খুব ভালো করেই জানে। কারণ, আধিপত্যবাদি ও সম্রাজ্যবাদী বিশ্বশক্তির উপমহাদেশীয় দালাল হচ্ছে ভারত। সুতরাং বাংলাদেশে কি হচ্ছে বা না হচ্ছে তার সবই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে হচ্ছে। এই কেন্দ্রীয় সরকারের মেন্ডেট বাগাতে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ উভয়ই সচেষ্ট ছিল। এই উদ্দেশ্যে দুই দলেরই শীর্ষ নেতারা দেশটিতে সফর করেছেন। কিন্তু বরাবরের মতোই ভারতের একনিষ্ঠ সহচর হিসেবে আওয়ামীলীগ সেই মেন্ডেটের চেরাগ বাতি হাতে পেয়েছে। ফলে, পশ্চিমারা এই অরাজক নির্বাচন গুলোর বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি কয়েকটা দায়সারা মন্তব্য বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে স্রেফ অফিসিয়ালি এবং পলিটিক্যালি রাইট থাকার জন্য। কিন্তু তলে তলে তারা জানেন যে- এভরিথিং ইজ ইন রাইট ট্রাক এবং সবকিছুই পরিকল্পনা মাফিকই হচ্ছে। পশ্চিমাদের মডেলের গণতন্ত্র, রাজনীতি এবং স্ট্যান্ডার্ডের যে পুস্তকি চাকচিক্যময় বয়ান রয়েছে, সেই বয়ানের মুলো কে প্রাসঙ্গিক ভাবে ঝুলন্ত রাখা এবং একই সাথে স্বার্থসিদ্ধ পলিটিক্স জারি থাকা- এই দুইয়ের স্বার্থেই তাদেরকে একদিকে ভোট ডাকাতি এবং মাফিয়া রাজনীতির বিরুদ্ধে দুই একটা বক্তব্য বিবৃতি দিতে হয় আবার অন্যদিকে প্রকারান্তরে মাফিয়াতন্ত্রের সাস্টেইনেবলিটিও নিশ্চিত করতে হয়।
ফলত, আওয়ামীলীগ খুব ভালো করেই জানে যে- ন্যাশনালি ও ইন্টারন্যাশনালি তারা যে একক কর্তৃত্ব হাতে পেয়েছে সেটা তাদেরকে এবসলিউট ক্ষমতা হাতে এনে দিয়েছে। সুতরাং সুশাসনের অভিনয়টিও তাঁদের করার দরকার নেই, সুষ্ঠু নির্বাচনের ভণিতাও তাঁদের করার দরকার নেই। দাসের কাছে মালিকের যেমন সঠিক-বেঠিক হওয়ার দায় নেই, তেমনি আওয়ামীলীগেরও বাংলাদেশের মানুষদের কাছে সঠিক-বেঠিক হওয়ার কোনও দায় নেই। কারণ জনগণ দাসের জীবন মেনে নিয়েছে। তারা ঘৃণাবাদকে গ্রহণ করেছে, চেতনার ফিল্টারে তারা শুদ্ধ হওয়ার বিষয়টিকে আত্মস্থ করে ফেলেছে। এরা অধিকারের দাবী নিয়ে যখন রাস্তায় নামে তখন আওয়ামীলীগকে সিজদা করতে করতে আন্দোলনে নামে। একবার মানবতার আম্মা, আরেকবার শিক্ষার আম্মা, আবার জাতির আব্বা…এগুলো করে করে তারা যেই মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে সেই মাফিয়াতন্ত্রের পায়েই সিজদাবনত থাকে। সুতরাং, আপনি যাকে খোদা মানবেন, যার দাসত্ব করবেন- তিনি আপনাকে দিলেও রহম হল আর না দিলেও রহম হল। এটাই এখন বাংলাদেশিদের মনে আওয়ামীলীগের অবস্থান। অতএব- আওয়ামীলীগ কেন সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে যাবে! বরং কোনও প্রকার ঝামেলা ছাড়াই জনগণের উচিৎ আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করে দেয়া। একদিকে দাসত্ব মেনে নিয়ে অন্যদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবী করাটা তো চেতনাধর্মের বয়ানে জঘন্য শিরক হয়ে যায়। এজন্যই বাঙালী কথায় কথায় রাজাকার হয়ে যায় এবং স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি হয়ে যায়। কারণ- যখনই এরা দাসত্বের অবস্থান থেকে এক চুল সরে আসে তখনই চেতনা ধর্ম থেকে তাঁদের ইমান চলে যায়। কারণ চেতনাধর্মের সাথে অন্য কিছুর ভাগ-বাটোয়ারা চলবে না। সেটা ধর্ম হোক, ইসলাম হোক কিংবা আপনার মানবিক ও মৌলিক অধিকার হোক।
সুতরাং আওয়ামীলীগের অবস্থান এখন এমন নয় যে দেশ ও বিদেশের কোনও পক্ষের কাছে তাঁকে সুষ্ঠুতার অভিনয় করতে হবে কিংবা ভালো একটা মুখোশ দেখাতে হবে। বরং আওয়ামীলীগের সাত খুনও এখন বৈধতার মর্যাদা পেয়ে গেছে। এই মাফিয়াতন্ত্রের একমাত্র ঔষধ হল দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসা। খুনের নেশায় মত্ত সশস্ত্র প্রতিপক্ষের সাথে কখনই “শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের” থিওরি টিকবে না। অগ্নি চোখে ঘুরে দাঁড়িয়ে মরণকে আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া মুক্তি নেই। কারণ যে দাসখতে আমরা স্বাক্ষর করেছি তাতে আমাদের মুক্তির অধিকার খর্ব হয়েছে। এখন আমাদেরকে লড়তে লড়তে মরতে হবে, এটাই আমাদের প্রায়শ্চিত্ত- যাতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর কোনও মাফিয়াতন্ত্রের খপ্পরে না পড়ে। আর যদি আমরা আত্ম-সমর্পিত দাসের মতো মরতে থাকি, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও এই মাফিয়াতন্ত্রের করুণ শিকারে পরিণত হবে।
Jabal At Tarik