আইসিইউতে রাজধানী।
সকালে যুদ্ধ শুরু হয় যানবাহনে উঠতে। অনেকটা সময় চলে যায় এতে। একবার ওঠে পড়লেও নিস্তার নেই। যানজটে বসে থাকতে হবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ধনী-গরিব সবারই এক হাল। তবুও রাজধানীর দিকে ছুটে আসছেন মানুষ। প্রতিদিন বাড়ছে ঢাকার জনসংখ্যা। কিন্তু কেন? কিসের টানে মানুষ ছুটে আসছে এখানে। আর কিছু নয়। জীবিকা আর শিক্ষা। মূলত এই দুটিই প্রধান কারণ। বাড়তি জনসংখ্যার চাপে প্রায় ভেঙে পড়ছে রাজধানী। ক্ষমতাবানদের লোভের কারণে খাল-বিল সব দখল হয়ে গেছে। আইন মানার বালাই নেই কারুরই। কিশোর আন্দোলনের কয়দিনেই যা একটু শৃঙ্খলা ছিল। এখন আবার ফিরে এসেছে সেই পুরনো ঢাকা। এখনই বড় কোনো পদক্ষেপ না নিলে ঢাকাকে কি বাঁচানো যাবে? সে প্রশ্ন বড় হচ্ছে দিনকে দিন।
দিনে ঢাকায় স্থায়ী হচ্ছে ১৭০০ মানুষ
বছরে ঢাকা শহরে নতুন করে ৬ লাখ ১২ হাজার লোক যুক্ত হচ্ছেন। প্রতি মাসে ৫১ হাজার আর প্রতিদিন প্রায় ১৭শ’ লোক এই শহরে স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছেন। জাতিসংঘের বরাত দিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিচার্স অ্যান্ড ট্রেনিং (নিপোর্ট) ২০১৩ সালের বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভের এক গবেষণার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা ১১তম বৃহৎ মেগাসিটি। যার জনসংখ্যা ১৭ মিলিয়ন (এক কোটি ৭০ লাখ)। পৃথিবীর অন্যান্য মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। আরেক জরিপে বলা হচ্ছে, ২০১৬ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ১৮ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এই শহরে বাস করছেন ২৩ হাজার ২৩৪ জন। যা বিশ্বের কয়েকটি জনসংখ্যা ঘনত্বপূর্ণ শহরের একটি। মোট আয়তন ৩শ’ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে দেশে গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস করেন এক হাজার ১১৫ জন। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তার ‘উন্নয়নে নগরায়ন’ বইতে লিখেছেন সিটি করপোরেশনের পুরান ঢাকার লালবাগ, কোতোয়ালি কিংবা সূত্রাপুর এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বর্গমাইলে ২ লাখেরও বেশি।
দশ বছর আগে কুষ্টিয়া থেকে এই শহরে পড়াশোনা করার জন্য এসেছিলেন শামীম আহমেদ। পড়াশোনা শেষে তিনি একটি বেসরকারি চাকরিও পেয়েছেন। তার চিন্তা তিনিও এই শহরে স্থায়ীভাবে থাকতে চান। রহিমা বেগম। বয়স ৪২ বছর। প্রতিদিন সকাল ৬টার পর কাজের অপেক্ষায় বসে থাকেন রাস্তার পাশে। আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটু পশ্চিমে ‘শ্রমহাটে’। আছেন নিত্যদিনের অন্য কাজ সন্ধানী অচেনা শ’তেক সহকর্মীও। রহিমা বেগম জানান, তিনি ইট ভাঙার কাজই বেশি করেন। কোনো দিন কাজ পান, আবার অনেক দিন শূন্য হাতেও ফিরে যান। কাজের খোঁজে আঠারো বছর আগে এ শহরে তার আসা। জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার চরগাঁও গ্রামে তার বাড়ি। বাড়িতে এক কাঠা জমি ছাড়া আর কিছুই নেই। এ কাজ করেই রহিমার কোনো রকমে সংসার চলে। এছাড়া প্রতিদিন এই শহরে বিভিন্ন সেবা নেয়ার জন্য আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন আরো চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ। দেশ-বিদেশে নগর নিয়ে গবেষণা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম নাজেম। মানুষ কেন ঢাকায় আসেন জানতে চাইলে ড. নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, অর্থনৈতিক ও জলবায়ুগত কারণে মানুষ ঢাকায় আসছে। অর্থনৈতিক কারণের মধ্যে রয়েছে দরিদ্রতা, বেকার ও ভূমিহীন। প্রধান যেসব উপাদানগুলো মানুষকে ঢাকায় টানছে বা আকর্ষণ করছে তা হচ্ছে- এখানে বিনিয়োগ, শিল্প-কারখানা বেশি, নির্মাণ কাজ, পরিবহন সেক্টর। আবার অন্যদিকে গ্রাম মানুষকে ধরে রাখতে পারছে না; কারণ কাজ নেই। কৃষিকাজ এখন অনেক হিসাব করে করা হয়। গ্রামেও অকৃষিভিত্তিক কাজ হচ্ছে। ঢাকা ম্যাগনেটিক পাওয়ার হিসেবে মানুষকে এখানে টানছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রতিদিন ঢাকা শহরে কমিউটার হিসেবে ৪ থেকে ৫ লাখ লোক আসেন লঞ্চ, ট্রেন ও বাসে। তারা এই শহরের বিভিন্ন সেবা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে আবার চলেও যান। অবস্থান করেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রশাসনিক, বিচার নানা কারণে রাজধানীতে আসতে হয় মানুষকে। গত দু’বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত জলবায়ুু পরিবর্তনে ঢাকার ওপর প্রভাব নিয়ে কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকা দেশের মোট আয়তনের ১ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশ মানুষ এখানে বসবাস করছে। গবেষণায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি আধুনিক সুযোগ-সুবিধার খোঁজে গ্রামের মানুষ ঢাকামুখী হচ্ছেন। অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের ৫৫ শতাংশই ঢাকায় চলে আসেন। জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৪০ শতাংশ আসে ঢাকা থেকে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এই শহর ঝুঁকিমুক্ত রাখার দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের বরাত দিয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পপুলেশন রিচার্স অ্যান্ড ট্রেনিং (নিপোর্ট) ২০১৩ সালের বাংলাদেশ আরবান হেলথ সার্ভের এক গবেষণার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে ঢাকা শহরের লোকসংখ্যা হবে ২৭ মিলিয়ন (২ কোটি ৭০ লাখ), যা ঢাকাকে বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহৎ শহর হিসেবে পরিণত করবে। গবেষণায় বলা হয়, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য জেলা থেকে রাজধানীতে আসেন ২৫ শতাংশ, বরিশাল বিভাগ থেকে ২০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১০ শতাংশ, রংপুর বিভাগ থেকে ৬ শতাংশ, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ থেকে ৪ শতাংশ করে এবং সিলেট বিভাগ থেকে এক শতাংশ। আর রাজধানীর নিজস্ব রয়েছে ৩০ শতাংশ জনসংখ্যা। জাতিসংঘ প্রণীত মেগাসিটির তালিকা অনুযায়ী এক কোটির উপরে বসবাসকারী নগরীকে মেগাসিটি বলা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার, ১৯৫১ সালে ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৮ এবং ১৯৬১ সালে ৫ লাখ ৫০ হাজার ১৪৩। ১৯৭৪ সালে আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৭ হাজার এবং ১০ বছর পর ১৯৮১ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ লাখ ৪০ হাজার। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১ কোটি ৭ লাখ। ২০০১ সালে ঢাকা মেগাসিটি হিসেবে এই শহরে লোকসংখ্যা ছিল ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ৭৬৩ জন। এই সংখ্যা ২০১১ সালে আদমশুমারিতে এসে দাঁড়ায় এক কোটি ৪১ লাখ ৭১ হাজার ৫৬৭ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম তার ‘উন্নয়নে নগরায়ন’ বইতে লিখেছেন ১৯৭৪ সালে যখন স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়, তখন ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৬ লাখের মতো। ’৮১-তে এসে ঢাকার জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫ লাখে, ’৯১-তে ৭০ লাখে। তখন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ঢাকা মহানগরকে মেগাসিটি নামে আখ্যায়িত করে। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনেও ঢাকাকে ’৮৬ সালেই মেগাসিটি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের ভারে ডুবতে বসেছে ঢাকা। বর্তমানে ঢাকা যেভাবে বাড়ছে এবং ঢাকামুখী জনস্রোত যদি থামানো না যায় তাহলে ভবিষ্যতে ঢাকা মহানগরী একটি অকার্যকর নগরীতে পরিণত হতে পারে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে দীর্ঘদিন ধরে বারবার উঠে এসেছে বসবাসের অনুপযুক্ত হিসেবে ঢাকা মহানগরীর নাম। তাদের মতে, এরপরও যদি কারো টনক না নড়ে তাহলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলেও মনুষ্যসৃষ্ট কারণেই একদিন পরিত্যক্ত হতে পারে ঢাকা। যানজট নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ঢাকা মহানগরীর আয়তন আর কোনো মতেই বাড়তে দেয়া উচিত নয়। এ ছাড়া এখনই থামানোর উদ্যোগ নিতে হবে ঢাকামুখী জনস্রোত। ঢাকাকেন্দ্রিক একমুখী উন্নয়ন বন্ধ করে বিভাগীয় এবং জেলা শহরগুলোতে উন্নত শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান এবং উন্নত জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে সামান্য কারণে মানুষকে ঢাকায় আসতে না হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, গণতান্ত্রিক দেশে এ কথা বলা যায় না যে, বর্তমানে যারা ঢাকায় আছেন এর বাইরে আর কেউ এসে এখানে বসবাস করতে পারবেন না। কিন্তু যারা ঢাকার বাইরে আছেন তাদের জন্যও ঢাকার সমান সুযোগ তৈরি করে তাদের ঢাকায় আসার প্রয়োজনীয়তা কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হলে সবার আগে ঠিক করতে হবে ঢাকার আয়তন এবং জনসংখ্যা কোন পর্যায়ে গিয়ে থামবে। এরপর সে আলোকে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বের সব বড় শহরে যানজট নিরসনে এভাবেই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমাদের সব উন্নয়ন কার্যক্রম এবং পরিকল্পনা ঢাকাকেন্দ্রিক। মানুষকে নানা কারণে ঢাকা আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঢাকামুখী এ স্রোত থামাতে না পারলে সমস্যার সমাধান হবে না। যে কারণে মানুষ ঢাকায় আসে সেসব কারণ গ্রামে নিয়ে যেতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সারওয়ার জাহান বলেন, স্বাধীনতার সময়ে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ। ’৮১ সালে ৩০ লাখ, ’৯১ সালে ৬৫ লাখ, ৪৩ বছরে প্রায় ১০ গুণ জনসংখ্যা বেড়েছে। তিনি জানান, ঢাকা বাংলাদেশের মাঝখানে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রে সবকিছুই হচ্ছে। পলিসির কারণে এখানে ব্যবসা করতে আসতে হয়। এই শহরের সঙ্গে নদী, রোড ও ট্রেন যোগাযোগ রয়েছে। এখানে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। অর্থাৎ সরকারের ক্ষমতা এখান থেকে পরিচালিত হয়। ফলে সবাইকে এখানে আসতে হয়। সমস্যার কারণে ঢাকার বাইরে শিল্প-কারখানা করতে চান না উদ্যোক্তারা। দেশে যত চাকরি হয় তার প্রায় ৪০ শতাংশ ঢাকায়। ফলে জনস্রোত বেশি। ফরমাল কাজও ঢাকার আশেপাশে বেশি হচ্ছে। এখানে রয়েছে বস্তিবাসীও। এসব কারণে ঢাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব বেড়েই যাচ্ছে। পুরান ঢাকায় প্রতি একরে ৪০০ থেকে ৫০০ লোক বাস করেন আর নতুন ঢাকা তথা ধানমন্ডি, গুলশানে ২০০ থেকে ২৫০ লোক বাস করেন। ফলে রাস্তাঘাটে চাপ বেশি।
নীতিমালা না মেনে খোঁড়াখুঁড়িঃ
ঢাকা মহানগরীর একটি চিরাচরিত চিত্র সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি। প্রায় সারা বছরই এ অবস্থা চলে। তবে, বর্ষাকালে এ চিত্র ভয়াবহ। উন্নয়ন, সেবা ও সংস্কারকে উপলক্ষ করে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, বিটিসিএল, ডেসকো, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরসহ বেশ কিছু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ খোঁড়াখুঁড়ি করে। পয়ো, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ড্রেনেজ সিস্টেম উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণের নামে চলে এ খোঁড়াখুঁড়ি। পুরো বর্ষাকালজুড়েই রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ, মিরপুর, মগবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ বিভিন্ন সড়কগুলোতে এ চিত্র দেখা গেছে। এতে করে নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা, যানজট, ধুলোবালি, কাদাপানি- সব মিলিয়ে নাভিশ্বাস নগরবাসীদের। নষ্ট হয় কর্মঘণ্টা। ঢাকার লাখ লাখ মানুষের জীবনযাপন ব্যাহত হয় মারাত্মকভাবে। এ থেকে মানুষের সামাজিক জীবন যাপন ও মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে যা বিশেষজ্ঞরাও বলে আসছেন। বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরীতে উন্নয়ন ও পুনঃনির্মাণের কাজ পরিহার করতে হবে বলে সড়ক খনন ও পুনঃনির্মাণ বিষয়ক নীতিমালায় উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ অলিতে গলিতে এই সময়েই খোঁড়াখুঁড়ি হয় সবচে বেশি। নীতিমালায় আরো উল্লেখ রয়েছে, সড়ক খননকাজ শুরুর ১৫ দিন আগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে খননকারী প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করে ও লিফলেট বিতরণ করে সাধারণ মানুষকে বিষয়টি অবহিত করার নিয়ম রয়েছে। একই সঙ্গে খননস্থলে সড়ক খননের উদ্দেশ্যসহ কাজ শুরু ও শেষ করার তারিখ সংবলিত সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে। পাশাপাশি কোনো সড়ক খননের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেখান থেকে মাটিসহ খননের ফলে উঠে আসা রাবিশ অপসারণ করতে হবে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ নিয়ম মানা হয় না। কাজের সময় সাময়িক অসুবিধার জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে দায়সারা হয়।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) কাজ শেষ করতে এবং সকল সংস্থার কাজ একই সময়ে শুরু ও শেষ করার জন্য সংস্থাগুলোর প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য প্রকল্প অনুমোদন, টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ নানা প্রক্রিয়া শেষ করতে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদাররা কাজ শুরু ও শেষ করতে পারেন না। যে কারণে অপরিকল্পিত সময়ে কাজ করতে গিয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে জানান তারা। তবে, এ বিষয়টি মানতে নারাজ নগর পরিকল্পনাবিদরা। তাদের মতে সড়ক খননের ক্ষেত্রে নীতিমালা না মানার কারণে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবামূলক সংস্থার মধ্যে কোনো সমন্বিত ব্যবস্থাপনা নেই। সব সংস্থাই যে যার মতো করে কাজ করছে। ঢাকায় নাগরিক দুর্ভোগের এটিও একটি বড় কারণ। নীতিমালা কেন অনুসরণ করা হয় না তা খতিয়ে দেখা উচিৎ বলে মনে করেন তারা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলাল মানবজমিনকে বলেন, সড়ক এবং ফুটপাতের কাজ হলে আমরাই অনুমতি দেই। আমাদেরও কিছু উন্নয়ন কাজ থাকে। মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্পও রয়েছে। এছাড়া পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ এগুলো তো আছেই। যে সমস্ত সংস্থা কাজ করতে চায় তারা একই সময়ে যাতে কাজ করে সেটিও জানিয়ে দেই। আর মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয়, যান চলাচলে যাতে সমস্যা না হয় সেজন্য শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে কাজ শেষ করতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সড়ক খনন ও নীতিমালার বিষয়টি মানা হয় কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নীতিমালা থাকতে পারে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া আছে। প্রকল্প পাস হতে হয়, টেন্ডার প্রক্রিয়ার বিষয় রয়েছে। এ সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ না করে তো কাজ শুরু করা যায় না। এ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে করতে হয় তো বছরের শেষ প্রান্তে চলে আসে। খান মোহাম্মদ বেলাল বলেন, কাজের ক্ষেত্রে এমন কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে, আমরা চাই নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময়ের মধ্যে যাতে কাজ শেষ করা হয়।
এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মানবজমিনকে বলেন, পৃথিবীর আর কোনো শহরে এভাবে খোঁড়াখুঁড়ি করতে দেয়া হয় বলে আমার জানা নেই। নীতিমালা ভঙ্গ করে কিভাবে এই খোঁড়াখুঁড়ি চলে এবং কিভাবে ঠিকাদাররা বিল পায়- এটিই হলো প্রশ্ন। যেখানে নীতিমালা রয়েছে যে এই সময়ে এ ধরনের কাজ করা যাবে না। সেখানে সেই কাজ কিভাবে করা হয়? তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যসব বড় শহরে রাতে যে জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়, রাতেই তা ভরাট করা হয়। দিনের বেলায় মানুষ বুঝতেই পারে না যে খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছে। কোনো কারণে যদি ভরাট করা না যায়, তাহলে স্টিল প্লেট লাগিয়ে দেয়া হয়, যাতে গাড়ি চলাচল করতে পারে। মানুষ যাতে গর্তে না পড়ে। কিন্তু ঢাকা শহরে এর ব্যতিক্রম। ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হওয়ার পেছনে এটিও দায়ী। মোবাশ্বের হোসেন বলেন, প্রত্যেকটি প্রকল্পের কিছু নির্দিষ্ট টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করা, কি পদ্ধতিতে এবং কতদিনের মধ্যে কাজ করতে হবে, কোনটার জন্য কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে- এসব বিষয় উল্লেখ আছে এবং এগুলো মিলিয়েই ঠিকাদারদের বিল দেয়ার কথা। কিন্তু এর কিছুই পালন করা হয় না। এখন কারা এই অনিয়মের করে তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. সরওয়ার জাহান বলেন, ঢাকায় খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে কোনো সমন্বয় নেই। একেকটি সংস্থা একেক সময় তাদের নিজ নিজ পরিকল্পনা মতো এটি করে। বছরের মাঝামাঝিতে এটি বেশি হয়। দেখা গেছে একই জায়গায় বার বার এটি হচ্ছে। তিনি বলেন, আসলে ঢাকা শহরের জন্য কোনো দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নেই। আগামী ২০/৩০ বছরে এই শহরের জনসংখ্যা কত বাড়বে, বাড়িঘরই বা কতটি হবে এ নিয়ে যদি দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা থাকতো তাহলে একবার খোঁড়াখুঁড়ি হলেই হয়ে যেত। এখন যেটা হচ্ছে এবং স্বল্প সময়ের পরিকল্পনায় যা করা হচ্ছে তাতে দেখা গেছে সেটি কাজে দিলো না। তখন বার বার একই কাজ একই জায়গায় করতে হচ্ছে। ড. সরওয়ার জাহান বলেন, অনেক দেশেই দেখা গেছে, স্থানীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের কাজ করতে হয়। কিন্তু এখানে সেটি নেই। যে কারণে সবাই নিজ নিজ পরিকল্পনায় যখন তখন কাজ করছে। যদি দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা না থাকে তাহলে সমস্যা চলতেই থাকবে। ড. সরওয়ার জাহান বলেন, যে সব শহরে গভর্নেন্স ও ব্যবস্থাপনা ভালো, সে সব শহরের পরিস্থিতিও বেশ ভালো। কিন্তু ঢাকা শহরে যে ধরনের বাজে ব্যবস্থাপনা তা পৃথিবীর খুব কম দেশেই আছে। তিনি বলেন, ঢাকায় যে অনুপাতে জনসংখ্যা সে অনুপাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার মতো ব্যবস্থাপনা ও পদ্ধতি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে না তোলার কারণেই আজকে এ পরিস্থিতি।
কমে নি গণপরিবহনে নৈরাজ্যঃ
এতকিছুর পরেও গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই। বাস-মিনিবাসের বেপরোয়া চলাচল, সিটিং ও বিরতিহীনের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পাল্লা দিয়ে ছুটে চলা, যত্রতত্র থামা, ওঠানামা করানো, ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন কোনোটাই বন্ধ হয়নি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেলেও এখনো চলছে ফিটনেসবিহীন বাস ও মিনিবাস। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, নগর পরিবহনে সেবা বলতে কিছু নেই। বেশিরভাগ বাসের সিট সরু-আরাম করে বসা যায় না। কোনো কোনো বাসের সিট নড়বড়ে, দরজা-জানালা নাই, বডি থেকে টিন খুলে পড়েছে, সামনে-পেছনের লাইট জ্বলে না, কালো ধোঁয়া বের হয়, চলতে গিয়ে বিকট শব্দ হয়। নিয়ম না মেনে চলার কারণে নগরীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টির কারণও এই যাত্রীবাহী বাসগুলো। সবকিছু মিলিয়ে পরিবহন সেক্টর সেই আগের মতোই বিশৃঙ্খল, অরাজক, নিয়মনীতিহীন।
সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ট্রাফিক সপ্তাহ হয়েছে। এতে বেড়েছে মামলা ও জরিমানা। তারপরও থামেনি চালকদের প্রতিযোগিতার মহড়া। এ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা। বন্ধ হয়নি ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারও। সব মিলিয়ে সড়কে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চলছেই। মঙ্গলবার ট্রাফিক সপ্তাহের শেষ দিন ছিল। বুধবার সরকারি ছুটির দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন কম দেখা গেছে। বাস কম থাকায় ঢাকার বিভিন্ন স্টপেজে শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাস না পেয়ে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা হন।
বিকাল ৪টা, শাহবাগ মোড়। মিরপুরগামী ভিশন পরিবহন ও গাবতলীগামী ৮ বাসকে পাল্লা দিয়ে চালাতে দেখা গেছে। অন্যদিকে যাত্রীদের গাড়ি থামিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায়। এক পুলিশ সদস্য বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা বাস চালকদের কারণে ঘটে। আবার অসচেতন পথচারীদের কারণেও ঘটে। তাই দুর্ঘটনা কমাতে হলে পথচারীদের সচেতন হতে হবে। গতকাল কয়েকটি স্পট ঘুরে দেখা গেছে, পাশে ওভারব্রিজ থাকলে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। পুলিশ সদস্যরা বলছেন, শুধু যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই দুর্ঘটনা বন্ধ হবে না। রাস্তা পারাপারে পথচারীদেরও সচেতন হতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরেও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরার কোনো লক্ষণ দেখছি না। আমরা আশা করেছিলাম, শিক্ষার্থীরা আমাদের যে পথ দেখিয়ে গেছে তার একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। কিন্তু গত কয়েক দিনে ট্রাফিক সপ্তাহের মধ্যেও এর তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। আগের মতোই গাড়িগুলো লেন মেনে চলছে না। যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে ওভারটেক করছে। তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ এ কদিনে শুধু বড় অঙ্কের মামলা ও বিশাল অঙ্কের জরিমানা আদায় করেছে। কিন্তু তারা শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি। তাহলে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরবে কবে? এ প্রশ্নের জবাবে সাধারণ বাস মালিকরা বলেছেন, পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি দলের নেতারা। আবার শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বেও আছেন মন্ত্রী-এমপিরাই। তাদের প্রভাবেই চালক থেকে শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া। এ কারণে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেশিরভাগ বাসেরই ফিটনেসসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপডেট নেই। তার প্রমাণ গত ৬ই আগস্ট থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরুর পর থেকে ঢাকায় বাস ঠিকমতো রাস্তায় নামছে না। বাস মালিকদের ভাষায়, এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ দেড় হাজার বাস চলাচল করেছে। এ কারণে গণপরিবহনের অভাবে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯শে জুলাই বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস আরো দুটি বাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফুটপাতে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের উপর তুলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দু’জন নিহত ও আরো ১০/১২ জন আহত হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ধীরে ধীরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে রূপ নেয়।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-মাওয়া রুটে এখনো চলছে ফিটনেসবিহীন বাস। গাজীপুর-সদরঘাট রুটেও দেখা গেছে ফিটনেসবিহীন বাস। মিরপুর এলাকায় গতকালও বেশ কয়েকটি ফিটনেসবিহীন বাস চলেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা। তাদের মতে, বাসগুলোর ভেতরের অবস্থা খুবই খারাপ। সিটগুলো নড়বড়ে। ছাদের ফুটো দিয়ে আলো প্রবেশ করে। এসব বাসের ফিটনেস থাকার প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে, একাধিক বাসকে পাল্লা দিয়ে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে গুলিস্তানে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে। গুলিস্তান থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে রায়েরবাগ, সাইনবোর্ডের বাসগুলো নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী তুলছে। অথচ অদূরেই দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ। এতকিছুর পরেও বন্ধ হচ্ছে না বিশৃঙ্খলা। তাহলে কবে ফিরবে শৃঙ্খলা এ প্রশ্নের জবাবে এক বাস মালিক নেতা বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দোষেই সব বিশৃঙ্খলা হচ্ছে তা কিন্তু নয়। সড়কে চলাচলের জন্য পথচারীদেরও কিছু নিয়ম-কানুন তো মানতে হবে। তা না হলে বিশৃঙ্খলা তো হবেই। আমরা শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছি।