অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জে জামায়াত।
২০ দলীয় জোট বিগত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করে। এর আগে নবম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ভূমিধস পরাজয়ের পর বিএনপি-জামায়াত জোট মাত্র ৩৩ আসন নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করলেও অধিকাংশ সময় কেটেছে সংসদ বর্জন করেই। ফলে ২০০৮ থেকেই মূলত এ জোট ক্ষমতার বাইরে। এ অবস্থায় যে কোন উপায়ে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ খুঁজছে জামায়াত। তা না হলে দলটির অস্তিত্ব রক্ষাই দায় হয়ে পড়বে-এমনটিই ভাবছেন এর শীর্ষ নেতারা।
জামায়াতের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে জামায়াত অবশ্যই অংশ নেবে এবং ২০ দলীয় জোটের হয়েই নির্বাচনে লড়বে। তারা আপাতত জোটগত নির্বাচনের বাইরে কোন কিছু চিন্তা করছে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে জামায়াত জোটগত নির্বাচনের বাইরে কিছু চিন্তা করতেও পারবে না। দলটির শক্তি ক্ষীয়মান। এককভাবে জামায়াত নির্বাচন করার মত শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তা ছাড়া জামায়াতের ইতিহাসে একক নির্বাচন করে দুই-তিনটির বেশি আসন পাওয়ার নজির নেই। কিন্তু জোটগত নির্বাচন করে ১৭-১৮ আসন পাওয়ার রেকর্ড রয়েছে। তাই দলটির শক্তি পুনরুদ্ধার করতে হলে জোটগত নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আদালতের নির্দেশে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন এবং দলীয় নির্বাচনী প্রতীক বাতিল হয়ে যায়। এরপরও জামায়াতের কার্যক্রম থেমে নেই। থেমে নেই নির্বাচনী প্রস্তুতিও। সম্প্রতি শেষ হওয়া সিটি নির্বাচনসহ অন্য স্থানীয় নির্বাচনেও প্রার্থী দিয়েছে দলটি। দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে না পারলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রতীক নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। একই পদ্ধতিতে আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
জামায়াতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০ দলীয় জোটের হয়েই জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে। সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে তারা। এরই মধ্যে ২০ দলের নেতৃত্বদানকারী বিএনপিসহ অন্য দলের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা হয়েছে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে। জোটবদ্ধ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচনে লড়বেন। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের এ সম্পর্কিত বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই। দলের নিবন্ধন না থাকা বা প্রতীক নিষিদ্ধ হওয়া নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা তেমন একটা চিন্তিতও নন। যে কোন কৌশলে নির্বাচনে অংশগ্রহণই তাদের লক্ষ্য। তবে কোন কৌশলে নিবন্ধনহারা জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নি।
দলটির এক সূত্র জানিয়েছে, জামায়াত অন্তত ৫০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন জেলা বা বিভাগীয় শহরে বেশকিছু বৈঠকেও মিলিত হয়েছে জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। সেসব বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জামায়াত ২০ দলীয় জোটের কাছ থেকে ৫০ থেকে ৭০ আসন চাইবে। যদিও ১০০-এর অধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মত জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে বলে জানায় এ সূত্র। দর কষাকষির জায়গা রেখেই জামায়াত এ আসনগুলো চাইবে। শেষতক জোটের সিদ্ধান্ত যা হয়, তা মেনে নিয়েই জামায়াত নির্বাচনে অংশ নেবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচন জামায়াতের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হবে। এ নির্বাচনে যদি তারা অংশ নেয় তবে নিবন্ধন ও প্রতীক হারানোর পর এটিই হবে তাদের প্রথম নির্বাচন। ফলে জামায়াতের মত দল মরিয়া হয়ে উঠবে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে। তারা মনে করে তাদের ভোটব্যাংক স্থায়ী। জামায়াতের ভোট অন্য কোনো বাক্সে পড়বে না। যদিও ১৯৯১ থেকে গণতান্ত্রিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে জামায়াতের ভোটের হার ক্রমাগত নিম্নমুখী হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে ১৯৯১-এর পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত আসন পেয়েছিল ১৮টি। সেবার তাদের ভোটের হার ছিল ১২.১%। তারপরের বার ১৯৯৬-এ সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে এককভাবে জামায়াত পেয়েছিল মাত্র ৩ আসন। সেবার ভোটের হার কমে হয়েছিল ৮.৬%। তারপরের বার ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসন পেয়েছিল ১৭টি। সে বছর ভোটের হার অর্ধেক কমে গিয়ে হয়েছিল ৪.২৮%। সর্বশেষ ২০০৮-এ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত আসন পায় মাত্র ২টি। সেবার তাদের ভোট পড়েছে মাত্র ৪.৬%।
জামায়াত তাদের ভোটব্যাংক ধরে রাখার পাশাপাশি দলের অস্তিত্বও ধরে রাখতে চায়। তাই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েই নিজেদের শক্তি ও প্রভাব জানান দিতে চায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতীক নিয়ে তারা লড়াইয়ের কথা জানালেও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকেও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এ সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেন, ২০ দলের হয়েই আমরা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব। আমাদের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বরাদ্দকৃত প্রতীকেই আমরা নির্বাচন করব। প্রতীক নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। তবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের কথা আমরা এখনই ভাবছি না। সূত্রঃ পরিবর্তন।