অর্থই সুখের মাপকাঠি নয়।
বিলাসিতা আর স্বচ্ছলতার মাঝে একটা ব্যবধান আছে। সে ব্যবধানটা হল ভালবাসা। আর সেই কারণেই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে ভালবাসাটাই থাকে মূখ্য। সেটিই তাদের অহঙ্কার। সেটিই হয় মূলতঃ তাদের অলঙ্কার!!! বিত্তশালীরা অনেক টাকা আছে বলে হয়ত অহঙ্কার করতেই পারে। বিলাসবহুল জীবনযাপনও করতেই পারে। অর্থই যদি সুখের মাপকাঠি হত, তাহলে পৃথিবীটা তো অন্যরকম হত। স্রষ্টা বোধ হয়, সে ভাবে করেন নি। চাওয়া মাত্রই অর্থ হয়ত মানুষের বাহ্যিক সব চাহিদা পূরণ করবে, কিন্তু কোথাও যেন একটা কমতি থেকে যাবে। হ্যাঁ, কিছু একটার অভাব বোধ হয় সুখ পাখিটাকে নাগালের মধ্যে এনে দিতে ব্যর্থ হবে। স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সমাজ, জনগোষ্ঠী, এভাবে সর্বব্যাপী বিশ্ব সমাজে ভালবাসা ছড়িয়ে দিতে পারলে, যে সুখের নহর বইবে, সে দিয়েই মূলতঃ মানব মনে শান্তি মিলবে। শুধু অর্থ ও প্রাচুর্য দিয়ে নয়।
জীবনে চলতে গেলে অর্থের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সে প্রয়োজনই বা কতটুকু? সেটির তো একটা সীমা পরিসীমা থাকা দরকার। হরহামেশা আপনি যদি শুধু অর্থের পেছনে ছুটে চলেন। পরিবারে সময় না দেন। আপনার লাইফ পার্টনার কী েকরছে, সন্তান সন্ততি কী করছে, সে নিয়ে আপনার ভাববার সময় নেই। এক সময় দেখলেন- আপনি অনেক কাঁড়িকাঁড়ি অর্থ ও ঐশর্য্য এর মালিকও হলেন। কিন্তু পরিবারস্থ সদস্যরা সকলেই বদলে গেছে। আপনি যা চেয়েছিলেন, সেটি হয় নি। প্রত্যাশার বাইরে চলে গেছে সবকিছু। অর্থ জুটেছে, ভালবাসা হারিয়েছে। কী করবেন? স্বনজনদের ভালবাসা যে কী দামি তখন হাঁড়েহাঁড়ে টের পাবেন। আপনি টাকার পিছনে ছুটছেন, অন্যদিকে আপনার প্রিয় মানুষগুলো আপনার পিছনে ছুটছে। তবে চাহিদা হল ভালবাসার। আর যদি তারাও টাকাকেই সুখ ধরে নেয়, তবে তারাও আপনার মত ভালবাসাহীন প্রাণিতেই রূপান্তরিত হবে! এটা এমন এক অবস্থা হেব, যা সারাক্ষণ তাড়াবে কখনও আপনাকে, কখনওবা আপনার প্রিয় মানুষগুলোকে! বিলাসিতাকে নয়, বরং আমরা যদি ভালবাসতে শিখি নিজেকে, চারাপাশের মানুষগুলোকে! সুখ আপনা আপনি এসে ধরা দেবে। স্বচ্ছলতা একটা মানসিক প্রশান্তি তো বটেই। সেটার প্রয়োজন তো আছেই। কিন্তু সেটি অর্জন করতে গিয়ে নির্বোধের মত ভালবাসা ও মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে নয়। তারপর আরও কথা থাকে। কতটুকু সম্পদ হলে নিজেকে স্বচ্ছল ভাবা যাবে। সেটা একান্তই নিজস্ব ব্যাপার। কারণ একজনের কাছে যেটা স্বচ্ছলতা, সেটাই অন্যের কাছে হয় বিলাসিতা। তাই নিজের বিলাসিতা করার কথা ভাববার আগে অন্যের অবস্থানটা একটু দেখা উচিত নয় কী! নয়ত আমরা মানুষ হলাম কি করে? নিজের অবস্থান নিয়ে সব সময়ই সন্তুষ্ট থাকা উচিত। একটা সময় দেখা যাবে, এ সন্তুষ্টিই অনেক উপরে নিয়ে যাবে। সেটা মানুষ হিসেবে তো বটেই, সাথে পূরণ হবে আমাদের ছোট বড় চাওয়াগুলোও। সাধ্যে থাকুক আমাদের চাওয়াগুলো, পূরণ হোক সকল পাওয়ার মত চাওয়া। সর্বোপরি, নিজের অবস্থানের ওপর শোকর গুজার করাটা মহান আল্লাহও পছন্দ করেন।