একবার ঘুরেই আসুন না কাছেরই দর্শণীয় স্থানঃ মায়াবী সিকিম।
তারিখঃ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭।।
আশেপাশে বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ অন্যন্য তুষার শৃঙ্গরাজির অনবদ্য রূপ, উচ্ছল নদী ও ঝর্না, নয়নাভিরাম সরোবর, চোখজুড়োন অর্কিড ও ফুল, নানা রঙের পাখি, গা ছমছমে অরণ্য— সব মিলিয়েই পার্শবর্তী দেশ ভারতের অধীনস্থ এ ছোট্ট রাজ্যটির নাম ‘সিকিম’। গ্যাংটক এ রাজ্যের রাজধানী। এ শহরটি সিকিমের বৃহত্তম শহর হিসাবেও পরিচিত এবং এটি শিবালিক পর্বতের উপর ৫,৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম পর্বত, কাঞ্চনজঙ্ঘার অতীব সৌন্দর্য এ গ্যাংটক থেকেও দেখা যায়। মোট ৬ লাখেরও বেশি জনসংখ্যাসহ সিকিমের মোট আয়তন হল মোটমুটি প্রায় ৭,০০০ বর্গ কিলোমিটার। রাজ্যের অধিকাংশ এলাকা পার্বত্যময় হওয়ায় সিকিমে গ্রীষ্মকাল বেশ মনোরম, তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রীর বেশি অতিক্রম করে না। অন্যদিকে শীতকালে তাপমাত্রা হিমাঙ্কেরও নীচে নেমে যাওয়ার কারণে এখানকার বাসিন্দারা মেরুদণ্ড শিহরিত কম্পন অনুভব করে। ১৯৭৫ সালে সিকিম, ভারতের একটি অংশ হয়ে ওঠে এবং তারপর থেকে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিকাঠামো, দেশের বাকি রাজ্যগুলোর মতই মেনে চলে। এ বিপুল সম্ভার সারা বছর পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তবে ছোট হলেও, সিকিমের দর্শনীয় জায়গার সংখ্যা এতই বেশি যে, এক যাত্রায় সব কিছু দেখা দুঃসাধ্য।
সিকিমের অনবদ্য সৌন্দর্য আর মোহনীয় রুপের বর্ণনা দিতে গিয়ে এ রাজ্যের অতীত ইতিহাস একটু না বললেই কী নয়! এটি এখন ভারতের অধীনস্থ একটি রাজ্য হলে কি হবে, আগে তো এটি ছিল একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র দেশ। তারপর কিছু চক্রান্তকারী আর ক্ষমতালোভী পিশাচের কারণে আজ এটি পরাধীন। যে জন্য একটি কথা তো প্রায়শ শুনি -”স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা বড় কঠিন।” আমি সে আলোচনাকে দীর্ঘায়িত না করে পর্যটন স্থান হিসেবে আমার আলোচনা েসীমাবদ্ধ রাখতে বেশি প্রয়াসী হব। সিকিমকে ভারতের অধিভুক্ত করতে লেন্দুপ দর্জি মূল ভূমিকা পালন করে। যাই হোক পর্যায়ক্রমে সিকিমকে ১৯৭৫ সালে ১৬ মে ভারতীয় একটি রাজ্য হিসেবে অফিসিয়ালি ঘোষণা করা হয়। আর লেন্দুপ দর্জি হল সে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী।
আমি শুরু করি রাজধানী সিকিম’ এর বর্ণনা দিয়েই। আগেই উল্লেখ করেছি, ৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক এক আধুনিক পাহাড়ি শহর। হোটেল, রেস্তোঁরা, ক্যাফেটেরিয়া, শপিং মল, অজস্র দোকানপাট— সব মিলিয়ে এক জমজমাট শহর। ‘মে-ফেয়ার’ ও ‘রয়েল প্লাজা’ হোটেলে ক্যাসিনোও আছে। আবার রোপওয়ে চড়েও আকাশপথে দেখে নেওয়া যায় গোটা শহর। ভালভাবে গ্যাংটক দেখতে গেলে হাতে দু’টি দিন রাখতেই হবে। প্রথম দিনটা গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিন তাশি ভিউ পয়েন্ট, হনুমান টক, গণেশ টক, রুমটেক গুম্ফা, রাঙ্কা গুম্ফা, অর্কিড হাউস, চোগিয়াল রাজবাড়ি, বনঝাকরি ঝর্ণা, ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজির মতো দ্রষ্টব্যগুলো। হাতে যদি কিছুটা বেশি সময় ও দেখার আগ্রহ থাকে তবে ঘুরে নিতে পারেন ফ্যামবং-লো অভয়ারণ্য ও হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক (রেড পান্ডা, ব্ল্যাক বিয়ার, স্নো-লেপার্ডের মুক্তাঞ্চল)।
ছাঙ্গুতে বরফের চাদর
দ্বিতীয় দিনটা রাখতে হবে জনপ্রিয় ছাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির সফরের জন্য। ছাঙ্গু লেকের (উচ্চতা ১২৪০০ ফুট) দূরত্ব গ্যাংটক থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। নীল জলের এই সরোবরটি বছরের অনেকটা সময়ই অবশ্য থাকে ধবধবে সাদা, অর্থাৎ বরফে ঢাকা। ছাঙ্গু থেকে আরও ১৮ কিলোমিটার দূরে নাথুলাতে রয়েছে ভারত-চীন সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারেই দেখা যাবে চিনের বাড়ি, টহলরত চিনা সেনা। নাথুলার উচ্চতা ১৪৪৫০ ফুট। ফেরার পথে চার কিলোমিটার (নাথুলা-গেট থেকে) উৎরাই রাস্তায় গিয়ে দেখে নিন নতুন বাবামন্দির। দুর্ঘটনায় অকালমৃত পঞ্জাব রেজিমেন্টের হরভজন সিঙের নামে এই স্মৃতিমন্দির। ফৌজিদের বিশ্বাস, হরভজনের আত্মা নাকি বিভিন্ন বিপদে এখানে ত্রাতার ভূমিকা নেয়। স্মৃতিমন্দিরে হরভজনের পোশাক, ছবি ইত্যাদি সযত্নে রক্ষিত আছে। ছাঙ্গু, নাথুলা ও বাবামন্দির-তিনটি জায়গাতেই আছে ক্যাফেটেরিয়া।
এম জি মার্গের আড্ডা
প্রয়োজনীয় তথ্য: সোম ও মঙ্গলবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিনই নাথুলা যাত্রার অনুমতি মেলে। গ্যাংটক পৌছেই দু’কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও এক কপি ভোটার পরিচয়পত্রের জেরক্স দিয়ে আবেদন করলে সহজেই মেলে এ অনুমতিপত্র। হোটেলে জমা দিলে তারাও আনিয়ে নিতে পারে অনুমতিপত্র।
যাওয়ার পথ: শিয়ালদহ, হাওড়া কিংবা কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়া উত্তরবঙ্গগামী যে কোন ট্রেনে এসে নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে। সেখান থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। আবার বিমানে বাগডোগরা পৌঁছে সেখান থেকেও চলে আসতে পারেন ১২৪ কিলোমিটার দূরে গ্যাংটকে। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ২৫০০-৪০০০ টাকা(গাড়ির মডেল অনুযায়ী)। সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার এনজেপি বা শিলিগুড়ি সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট-এর শেয়ার ভিত্তিতে চলা গাড়িও নিতে পারেন। ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ২০০-৩০০ টাকা। এ ছাড়া গ্যাংটকের বাসও ছাড়ে।
গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির (নতুন) সফরের গাড়ি ভাড়া (গাড়িতে আট জন যাবে এ ভিত্তিতে) পড়বে মাথাপিছু ৮০০-১২০০ টাকা। সময় ভেদে অবশ্য যথেষ্ঠ হেরফের হয় এ ভাড়ায়।
গ্যাংটক ও আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার জন্য সারাদিন গাড়ি রিজার্ভ করলে পুরো গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকা।
তাশি ভিউ পয়েন্ট থেকে এমনই মোহময়ী কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ
রাত্রিবাসের ঠিকানা:
ক) ‘হোটেল নির্বাণা রেসিডেন্সি’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা, তিন শয্যার ঘর-১৫০০ টাকা, চার শয্যা ঘর-২০০০ টাকা।
যোগাযোগ: ৯৮৩১৯-৭২৪৬৮, ৯১৬৩৬-৫০৫৫৬
খ) ‘সাই রেসিডেন্সি’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ২০০০-৪৫০০ টাকা।
যোগাযোগ: ৯৯৩৩০-২০০৩৭
গ) ‘সোয়াংগ হোটেল’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১৮০০-২৫০০ টাকা।
যোগাযোগ: ৮২৫০৮-৯৩৩১৫
ঘ) ‘নিউ হোটেল সিকিম’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১৫০০-২৫০০ টাকা
যোগাযোগ: ৯০৫১১-৬৬৬৯৩
ঙ) ‘হোটেল বজ্র কিলা’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা
যোগাযোগ: ৯৯৩৩০-০৩৭৩৩
(বাংলা থেকে সিকিমের সব ফোনই লোকাল কল, এস.টি.ডি নয়)
আকাশ-পথে
পাকইয়ং ইয়াকতেন:
দমবন্ধ করা ভিড়, হইচই ইত্যাদি থেকে দূরে গিয়ে নির্জন, নির্মল পরিবেশে বসে হিমালয়ের অপার শোভা উপভোগ করা যদি উদ্দেশ্য হয়, তবে চলে আসুন এই জায়গায়। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী রাস্তা ধরে গিয়ে রানিপুল থেকে (এখান থেকে গ্যাংটক মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে) ডানহাতি রাস্তায় ঘুরে যান। কিছুটা এগোতেই পৌঁছে যাবেন সারামসা উদ্যানে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো বিরাট এক উদ্যান, দেখবার মতো। সারামসা উদ্যান দেখে সিকিমের একমাত্র বিমানবন্দরের (পাকইয়ং-এ নবনির্মিত এই বিমানবন্দর এই বছরই শুরু হয়ে যাবে বিমান চলাচল, তখন পাকইয়ং-এর গুরুত্বও বেড়ে যাবে বহুগুণ) কাছ দিয়ে পৌঁছে যান পাকইয়ং। রানিপুল থেকে দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার এবং এনজেপি থেকে দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার।
ঝান্ডিদাঁড়ায় আপনার সঙ্গে লুকোচুরি খেলবে কাঞ্চনজঙ্ঘা
৪৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাকইয়ং এক অপার শান্তির জায়গা। প্রাণভরে শ্বাস নিন। হোমস্টে-তে রাত্রিবাস। অন্তত দুটো দিনের অবকাশ রাখতেই হবে ঠিক ভাবে দেখার জন্য। মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই ইয়াকতেন গ্রাম। এখানেও আছে বেশ কিছু হোমস্টে। ইয়াকতন থেকে পায়ে হাঁটা(আড়াই কিলোমিটার) চড়াই পথ ধরে ঘুরে আসুন ঝান্ডিদাঁড়া (উচ্চতা ৬৭০০ ফুট) থেকে ৪০-৪৫ মিনিটের মোটামুটি আরামদায়ক হাঁটার (ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে) শেষে ঝান্ডিদাঁড়া পৌঁছে পুলকিত হয়ে উঠবে মন। পাহাড়ের শীর্ষে ছোট্ট এক পাথুরে অবস্থানে দাড়িয়ে চারধারে ৩৬০ ডিগ্রী ব্যাপী দৃশ্য উন্মুক্ত হয়ে যাবা চোখের সামনে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবরু, রাথং, কুম্ভকর্ণ সহ-অন্যান্য তুযারশৃঙ্গরাজির নয়নাভিরাম দৃশ্য তো আছেই, সঙ্গে আছে নাথুলা অঞ্চলের তুষারশৃঙ্গ, রোচেলা টপ (যেটি অতিক্রম করে ভুটান যাওয়া যায়), টেমিটি গার্ডেন, কালিম্পং পাহাড় ইত্যাদি জায়গার চোখজুড়ানো ছবিও। ছেড়ে আসতে মন চাইবে না। সূর্যোদয়ের সময় এক অসাধারন দৃশ্যের অবতারণা হয় এখানে।
ইয়েকতেন থেকে মাত্র ছয় কিলোমিটার দূরে বোজেটার গ্রামটিও ঘুরে নিন এই যাত্রায়। পাইন আর পিপলি গাছে ছাওয়া ‘ওয়েসিস অব পিস পার্ক’ বা (শান্তিবন উদ্যান) মনকে সত্যিই শান্তি দেবে। পাশেই আছে এক বহু প্রাচীন গুহা ও চমৎকার এক ভিউ-পয়েন্ট। এখানে থেকে তুষারশৃঙ্গের দৃশ্য যেমন চমৎকার দেখায়, তেমনি ভালোলাগে উল্টো দিকের পাহাড়ে লেপটে থাকা পুরো গ্যাংটক শহর ও রুমটেক গুম্ফার মিনিয়েচার ছবি।
উৎসাহী পর্যটকেরা পাকইয়ং বাজারের কাছে দেখে নিতে পারেন সেরেনডিপিটি মিউজিয়ামটি। ২০০ বছরের প্রাচীন এক কাঠের বাড়িতে সযত্নে রক্ষিত আছে প্রাচীন মুদ্রা, দুস্প্রাপ্য চিঠি ও ছবি, অস্ত্রশস্ত্র, লন্ঠন, মূর্তি, ক্যামেরা, স্ট্যাম্প ইত্যাদি। এগুলির বেশিরভাগই সিকিম রাজাদের সময়কালের জিনিস।
পাহাড়ি ভালবাসা
যাত্রাপথ:
নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন থেকে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন ১২০ কিলোমিটার দূরে পাকইয়ং-এ। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকা। দূরত্ব কিছুটা কমাতে চাইলে রংপো থেকে গ্যাংটকের মূল রাস্তা ছেড়ে ডানহাতের রাস্তায় ঢুকে রোরাথাং হয়ে পৌঁছতে পারেন পাকইয়ং, তবে এক্ষেত্রে সারামসা উদ্যান কিন্তু সেই পথে পড়বে না। আর কম খরচে আসতে চাইলে গ্যাংটকগামী বাস (ভাড়া ৯০ টাকা) বা শেয়ার জিপে রানিপুল পৌঁছে (ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা) সেখান থেকে শেয়ার (ভাড়া ৬০ টাকা) গাড়িতে পৌঁছতে পারেন পাকইয়ং। গ্যাংটক থেকেও আসা যেতে পারে ২৮ কিলোমিটার দূরবর্তী পাকইয়ং-এ।
রাত্রিবাস:
ইয়াকতেন-এ বেশ কিছু হোমস্টে আছে থাকার জন্য। তবে একটু ভালো মানের, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জায়গায় থাকতে চাইলে পাকইয়ং-এর ‘অ্যালপাইন রিট্রট’-এ রাত্রিবাস করা যেতে পারে। ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা (মাথাপিছু, খাওয়া-থাকা সমেত)। হোমস্টেগুলিতে খাওয়া-থাকা নিয়ে মাথাপিছু ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। যাতায়াত ও থাকার জন্য যোগাযোগঃ
প্রহ্লাদ প্রধান(পাকইয়ং):৮৩৪৮৮-১৩৮৪৫, ৮১১৬১-০৭০৭১
আরিতার লেক:
বাংলা-সিকিম সীমান্তের কাছাকাছিই অবস্থান এই লেকটির। পেডং-এর দিক দিয়ে এলে রেশিতে রেশিখোলা নদী পেরোতেই বাংলা শেষ, সিকিম শুরু। যেখান থেকে আরিতার লেক খুবই কাছে (মাত্র ছ’কিলোমিটার)। আবার রংপো অবধি জাতীয় সড়ক ধরে এসে রোরাথাং, রিনক হয়েও পৌঁছনো যায় এখানে। ৪৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পান্নাসবুজ রঙের এই সরোবরটির দৈর্ঘ্য ১১২০ ফুট, প্রস্থ ২৪০ ফুট। লেকের চারপাশ দিয়ে সুন্দর বাঁধানো রাস্তা ধরে পায়ে হেঁটে বেড়াতে পারেন। ইচ্ছে করলে, প্যাডল বোট ভাড়া করে ভেসেও পড়া যায় লেকের জলে। ঘুরে নিতে পারেন পাশেই অবস্থিত আরিতার গুম্ফাটিও। আরিতার লেককে অবশ্য লামপোখরি নামেই চেনেন স্থানীয় মানুষজন।
উপর থেকে আরিতার লেক
লেকের কাছ থেকেই আর একটি রাস্তা ধরে এবারে পৌঁছে যান লেক সংলগ্ন পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত মাংখিম-এ। ৬৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই মাংখিম থেকে ‘বার্ডস আই ভিউ’-তে অনেকটা উপর থেকে পুরো আরিতার লেকটিকে দারুণ সুন্দরভাবে দেখা যায়। পাহাড়শীর্ষে রয়েছে রাই উপজাতিদের মন্দির। আবহাওয়ায় ভাল থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ অন্যান্য তুষারশৃঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়।
যাত্রাপথঃ নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রংপো, রোরাথাং হয়ে আরিতার লেকের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটার। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পরবে ৩০০০-৩৫০০ টাকা। রংপো অবধি শেয়ার জিপে এসে সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে কিংবা শেয়ার জীপেও পৌঁছতে পারেন আরিতার।
বরফে ঢাকা নাথুলা বর্ডার
রাত্রিবাসঃ
১। সবথেকে ভালো অবস্থানে রয়েছে মাংখিম-এর ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা মিরর হোমস্টে’। এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যায়। আবার আরিতার লেককেও দেখা যায় পাখির চোখের মত।
প্রতি দিন ৮০০-১২০০ টাকা মাথাপিছু ভাড়া (খাওয়া,থাকা সমেত)। দ্বিশয্যা, তিন শয্যা, কটেজ সবরকম ব্যবস্থাই রয়েছে।
যোগাযোগঃ ললিত রাই: ৯৭৭৫৯-১৫০৪৭
২। লেকের কাছে রয়েছে ‘হোটেল সিল্করুট স্টেশন’
দ্বিশয্যাঘর: ৯০০-১২০০ টাকা
ত্রিশয্যাঘর: ১২০০-১৫০০ টাকা
চারশয্যাঘর:১৫০০-২০০০ টাকা
যোগাযোগঃ ৯১২৯১-২২৪২৬
৩। বাজার এলাকায় আছে ‘হোটেল আদিত্য’
দ্বিশয্যাঘর: ১০০০-১৫০০ টাকা
চারশয্যাঘর: ২০০০-২৫০০ টাকা
যোগাযোগ: ৯৯৩২৪-৮৭৩৫৮
কিছু জরুরি তথ্য:
১) সিকিমের যে কোনও জায়গায় হোটেল, হোমস্টে বুকিং কিংবা যাতায়াতের জন্য গাড়ি বুকিংয়ের জন্য সিকিমে যোগাযোগ করতে পারেন নারায়ণ প্রধানের সঙ্গে। ফোনঃ ৮৪৩৬৬-৪৯০০১, ৭০৩১৩-০৮৫০৮
২) সিকিমে ঘোরার জন্য যে কোনও জরুরি তথ্যের ব্যাপারে যোগাযোগ: এম কে প্রধান (জয়েন্ট ডিরেক্টর, সিকিম ট্যুরিজম, গ্যাংটক), মোবাইলঃ ৯৮৩২০-৬৫৬১৭, ৮১১৬১-০৭০৭১