অবশেষে ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি গঠনের পরিকল্পনা ভুল প্রমাণিত।। মূল দলের সেক্রেটারির কথা শুনছে না ছাত্রসংগঠন।
[নাম না প্রকাশের শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা টেলিফোনে বলেন, শুধু বিএনপিকে মোকাবেলার জন্য নয়, মূলতঃ স্কুল কমিটিতে বেশি কাজ করে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামির একটি ছাত্রসংগঠন। সে হিসেবে পার্টির হাই কমান্ড থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হল, ছাত্রশিবির যেখানে কমিটি করে সেখানে নেতৃত্ব ও যোগ্য কর্মী সৃষ্টি করে, সেখানে ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে উল্টা। একজন ছাত্র মেধাবী নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার বদলে বেশি বড় মাস্তান হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা আপাতত স্কুল পর্যায়ে কমিটি করা স্থগিত করেছি। ]
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা সত্ত্বেও মাধ্যমিক স্কুলে করা কমিটি বাতিল করছে না ছাত্রলীগ। তবে নতুন করে কোন কমিটি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছাত্র সংগঠনটি। গত ২১ নভেম্বর মাধ্যমিক স্কুলে কমিটি তৈরি করতে সব সাংগঠনিক ইউনিটকে নির্দেশ দিয়েছিল ছাত্রলীগ। সংগঠনের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীনকে এটি সমন্বয়ের নির্দেশও দেয়া হয়। ছাত্রলীগের তথ্য মতে, ঢাকার আটটিসহ দেশের ৩০ থেকে ৩৫টি স্কুলে কমিটি করেছে সংগঠনটি। এর আগেও কিছু স্কুলে কমিটি ছিল। ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের স্কুল পর্যায়ে কোন কার্যক্রম নেই। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েই কার্যক্রম চালায়। অল্প কিছু স্কুলে ছাত্রলীগের আগে থেকেই কমিটি থাকলেও কিশোরদের মধ্যে ছাত্রলীগের তেমন কোন তৎপরতা ছিল না। যদিও সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে আগে থেকেই স্কুল বিষয়ক সম্পাদকের পদ ছিল।
কিশোরদের মধ্যে তৎপরতা বাড়াতে ছাত্রলীগ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকেই এ উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা কৈশোরেই রাজনীতিতে জড়িয়ে গেলে পড়ালেখায় তাদের মনযোগ থাকবে কি না, এ নিয়ে সংশয়ের কথা জানান বিভিন্ন জন। আবার ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহিংসতার প্রবণতা থাকায়ও এ নিয়ে এক ধরনের ভীতি ছড়িয়েছিল। নাম না প্রকাশের শর্তে ছাত্রলীগের এক নেতা টেলিফোনে বলেন, শুধু বিএনপিকে মোকাবেলার জন্য নয়, মূলতঃ স্কুল কমিটিতে বেশি কাজ করে ছাত্রশিবির। ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামির একটি ছাত্রসংগঠন। সে হিসেবে পার্টির হাই কমান্ড থেকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হল, ছাত্রশিবির যেখানে কমিটি করে সেখানে নেতৃত্ব ও যোগ্য কর্মী সৃষ্টি করে, সেখানে ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে বিষয়টি হয়ে যাচ্ছে উল্টা। একজন ছাত্র মেধাবী নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার বদলে বেশি বড় মাস্তান হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আমরা আপাতত স্কুল পর্যায়ে কমিটি করা স্থগিত করেছি।
আবার স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের নয় দিনের মাথায় পিরোজপুরের নাজিরপুরে একটি স্কুলের শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় নাম আসে ওই স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ওই কমিটি বিলুপ্ত করলেও তখনও ছাত্রলীগের এই উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
ছাত্রলীগ এই সিদ্ধান্ত নেয়ার এক মাস পর গত ২৩ ডিসেম্বর রাজধানীতে ছাত্রলীগের এক আলোচনায় কাদের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি ধারণাটি ঠিক না। এ মুহূর্তে একটি সমালোচনা ডেকে আনার দরকার নেই। স্কুল কমিটির উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে।’
কাদের আরও বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের পিঠের উপর বই-পুস্তকের বোঝা, বাচ্চাগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন মরুভূমির পথ বেয়ে চলছে। তারপর আবার রাজনীতির আরেক বোঝা। দরকার নেই এসবের।’তবে কাদেরের আপত্তিতেও স্কুল কমিটি করার সিদ্ধান্ত থেকে পুরোপুরি সরে আসতে চাইছে না ছাত্রলীগ। তবে নতুন করে কোথাও এই কমিটি করা হবে না বলে জানিয়েছেন নেতারা।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, ওবায়দুল কাদের ‘এই মুহূর্তে সমালোচনা টেনে আনার দরকার নেই’ উল্লেখ করায় ছাত্রলীগ ভেবেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কথা বলেছেন তিনি। তিনি ভবিষ্যতের জন্য কখওন এই ধরনের কমিটি করতে না করেন নি। এ কারণেই এই উদ্যোগ থেকে পুরোপুরি পিছিয়ে আসতে চাইছে না ছাত্র সংগঠনটি। ওবায়দুল কাদের বিরোধিতা করলেও স্কুল কমিটি বাতিল হবে না-জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি একটি সময়ের প্রেক্ষিতে এই কথা বলেছেন। তিনি তো আমাদেরকে এই উদ্যোগ বাতিল করতে বলেন নি।’
কিন্তু ওবায়দুল কাদের তো বলেছেন, স্কুলে ছাত্র সংগঠনের দরকার নেই- এই মন্তব্যে সোহাগ বলেন, ‘আপাতত আমাদের স্কুল কমিটি গঠনের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তার কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’ একই ধরনের কথা বলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এক এম জাকির হোসাইনও। তিনি বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পরামর্শে নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। আপাতত আর কোন স্কুলে এই কমিটি গঠন করা হবে না।’
[ঢাকা টাইমস এর রিপোর্ট অবলম্বনে।]