অবশেষে কী প্রতারণার দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক
।।নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।। স্থানীয় সময়ঃ ১ ডিসেম্বর ২০১৭ রাত আটটা।।
লে এবার নতুন করে ঠ্যালা সামলা। নাগরিকত্ব নিয়ে ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন কি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দি?। বিভিন্ন সময় টিউলিপ বাংলাদেশ সফর করেছেন কোন ভিসায়? এ নিয়ে ব্রিটেনের মেইন স্ট্রিম মিডিয়া একটু মাথা ঘামনো শুরু করেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটেনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। চ্যানেল ফোর এর সাংবাদিক হ্যানস্তার পর মিডিয়া জগতে টিউলিপকে নিয়ে তাদের নতুন করে স্টাডি শুরু হয়েছে। অথচ এর আগে এসব ইস্যু নিয়ে তারা ভাবতে খুব একটা আগ্রহী ছিল না। এখন বিষয়টি যেন অনেকটা বিষধর মৌমাছির মৌচাকে আঙ্গুল দেওয়ার মত অবস্থা। মৌচাকে একটু ঢিল দিলেই কী হয়? সকল মৌমাছিগুলো এক যোগে বের হয়ে আসে। মৌচাকে ঢিল মারা প্রাণিকে সে আর নিস্তার দিতে চায় না। টিউলিপের অবস্থাও যেন এখন তেমনই হল। সব মিলিয়ে বিষয়টি টিউলিপের জন্য সুখকর কোন খবর নয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাতনি হিসেবে তাঁর এ অবস্থার জন্য অনুতপ্ত।
এবার নতুন ঝামেলায় জড়িয়েছেন ব্রিটেনে লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিউলিপের আপন খালা। এ কারণে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন টিউলিপ সিদ্দিক। সর্বশেষ তিনি তাঁর স্বামী ক্রিস্টিয়ান উইলিয়াম সেন্ট জন পার্সিকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর। প্রশ্ন উঠেছে তিনি কিভাবে এসেছিলেন? কোন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে আসেন তিনি? বাংলাদেশ এবং ব্রিটেনের নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকরা দ্বৈত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত। সে সুবাদে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি ব্রিটেনের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্বও বহাল রাখতে পারেন।
সেক্ষেত্রে কোন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকরা পাসপোর্ট নিয়ে দুটি উপায়ে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন।
এক, ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে যথানিয়মে ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে পারবেন। দুই, ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে নিজে ব্রিটেনেকে বাংলাদেশি নাগরিক প্রমাণ করে ব্রিটিশ পাসপোর্টে যথানিয়মে ‘নো ভিসা রিকোয়্যার্ড ‘ সিল মেরে সেই পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ সফর করতে পারেন। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের এমপি হিসেবে কিংবা সাধারণ নাগরিক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অনেকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু কোন নিয়মে তিনি কিভাবে বাংলাদেশ সফর করেছেন ? ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে, নাকি দ্বৈত নাগরিক হিসেবে?
এ প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে এ কারণে যে, গত ২৫ নভেম্বর ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনকে টিউলিপ সিদ্দিক প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘তিনি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং তিনি বাংলাদেশে নাগরিক নন’। বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের আত্মীয় স্বজন থাকায় তার দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ থাকলেও তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি নিজেকে বাংলাদেশের নাগরিক মনে করেন না। তাহলে জন্মসূত্রে একজন ব্রিটিশ সিটিজেন টিউলিপ সিদ্দিক এতদিন কোন উপায়ে বাংলাদেশ সফর করেছেন? অনেকই মনে করছেন, টিউলিপকে এখন ব্রিটেন এবং বাংলাদেশের জনগণের সামনে এ বিষয়টি খোলাসা করা দরকার।
২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর টিউলিপ বাংলাদেশ সফর ব্রিটিশ নাগরিক, নাকি দ্বৈত নাগরিক হিসেবে করেছেন? দ্বৈত নাগরিক হলে তাঁর পাসপোর্টে কি বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য ‘নো ভিসা রিকোয়্যার্ড ‘ সিলটি ছিল? আর ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ সফর করলে তিনি কি বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে ভিসা নিয়েছিলেন? এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ হাই কমিশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, হাই কমিশন টিউলিপ সিদ্দিকের কাছ থেকে ভিসার জন্য কোন আবেদনই পায় নি। তারপরই তো তাঁকে কি সিল দেওয়া যায়, সে প্রসঙ্গটি। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে, পরিচয় গোপন করে কিংবা নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একজন ব্রিটিশ এমপি বাংলাদেশ সফর করেছেন? এ বিষয়টি এখন হাউস অফ কমন্স এবং লেবার পার্টিতেও আলোচনায় আসতে পারে বলে জানিয়েছেন লেবার পার্টির একজন সাবেক প্রভাবশালী এমপি।
সূত্রমতে, এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে যৌক্তিক জবাব পাওয়া না গেলে নাগরিকত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেইস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
[গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অবলম্বনে রচিত]