।। সবিনয় নিবেদন।। নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।।
তারিখঃ ৩ নভেম্বর ২০১৭।।
জাতি’র কর্ণধারগণের উন্নয়নের মহাসড়কে উঠার সে কী প্রয়াস! আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দেশ এখন মোটামুটি চলছে এভাবেই। এ ভিডিও’টায় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে আসা চাকরি প্রত্যাশী’র উত্তরগুলোর মতই বাংলাদেশ এখন এরকম ভোজবাজি করে চলছে। দেখা যাক, এভাবে চলতে থাকলে উন্নয়নের মহাসড়কে নাকি বঙ্গোপসাগরের তীরে নিয়ে পৌঁছায়। কোনটা হয়!!! আল্লাহ মালুম। কেননা ভরসা তো শেষাবধি নৌকা’র ওপর রাখার কথাই বলা হচ্ছে। সাগর তীরে না পৌঁছালে নৌকা’য় যাত্রা হওয়ার প্রশ্ন আসবেই বা কেন?
এত মিথ্যা কথা আর ধোকাবাজি যে দেশের রাজনীতিকরা করে, সে দেশের জনগণের ভাগ্য যে শিকায় উঠবে, তা বলাই বাহুল্য। আমি তো কোন রাজনৈতিক দণল করি না। বিএনপি, না আওয়ামি লিগ, না অন্য কোনটা। রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হালচাল দেখে এর ওপর আমার বড়ই অনিহা, তা আমি হলফ করে বলতে পারি। সৎ ও মেধাবীদের রাজনীতি করতে চাইলেও তাদের নানানরকম বাধা ও তীব্র প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়। আগেকার দিনে মানুষ জানত, কোন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর ওপর ক্ষমতাশীন যদি রুষ্ট হয়, তাহলে তাকে গ্রেফতার ও শেষাবধি জেলে পুরো। এরপর বিচারবিভাগের মাধ্যমে কমবেশ একটা কিছু। সেসময় যে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ড হয় নি, তা নয়। সেটিও হয়েছিল এ রকম একটা দলের সরকারের সময়ই। এরপর জিয়া গেল, এরশাদ গেল। যত প্রতিবাদী মানুষই সামনে আসে, সব গুলি করে মেরে বা গুম করে হলেও ক্ষমতায় থাকতে হবে। সে রবকম হলে এরশাদের চেয়ে আর কেউ অত বেশি পারত না বলেই আমার বিশ্বাস। আমি এরশাদের পক্ষে গাইছি না। সে সময়টা আমি দেশের পরিস্থিতি খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। অন্য দু’জনকেও খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল। একজন যখন ক্ষমতায়, তখন। আর অন্যজন যখন মাত্র দেশে আসলেন। জিয়াউর রহমান সাহেব তাঁকে দেশে আসতে অনুমতি দিলেন। সবেমাত্র দলের হাল ধরলেন, সে সময়। এরশাদের আমলেই পুরো সময় দেশে ছিলাম যদিও। অন্য সময় বেশির ভাগ সময় আমি দেশের বাইরে সময় কাটাতাম। আরও কতজনই স্বল্প সময় নিয়ে সরকার গঠন করে গেল। কিন্তু এমন এক দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দেয় নি। এরকম করে ক্ষমতায় থাকতে চাইলে এরশাদ আরও ভাল পারত।
বেগম জিয়া’র সড়কপথে গাড়ি বহরে হামলা কে করল, সেটি বুঝি বাংলাদেশের মানুষ একটুও বঝে নি? নাকে টিপলে দুধ বের হয়, এমনই মনে করে সরকার। জনগণ খুবই সচেতন। এ বুঝতে সচেতন হওয়ারও দরকার নেই। শুধু ভাত আর মাছ খেলেও বুঝবে। আর মাছ না থাকলে ডাল দিয়ে খেলেও সরকারের এ সব ভাওতা বুঝে। আর মানুষ বুঝি দেখে না, নিজেদের মধ্যে খাওয়া খাওয়ি নিয়ে কত মারামারি, লাঠালাঠি, খুনাখেুনি। পুলিশ ছাড়া ক্ষমতাশীন সরকারের কেউ বা দলের হর্তাকর্তা কেউ রাস্তায় বের হতে পারবে? বোধ হয় না। ডেভিড ক্যামেরুন তো পাবলিক যাতায়াত করে সে রকম বগি’তে করে যাতায়াত করল। তখন তিনি ব্রিটেন নামক দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তিনি যাতায়াত করলেন, রড ধরে দাঁড়িয়ে। বসার কোন সিটও পায় নি। কেউ হয়ত দিতে চেয়েছিল, তিনি তা নেন নি। সে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল। আর আমাদের দেশে রাজধানীতে বসে হেড অব দ্যা স্টেট যখন ভিডিও কনফারেন্স করে, তখন অলক্ষ্যে স্রষ্টা হয়ত হাসে।
থাক, আর বেশি কিছু লিখি না। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি সুশাসন চাই। আওয়ামী লীগ যদি সুশাসন দেয়, তাহলে আমি আওয়ামী লীগ সমর্থন করব। দয়া করে আর লোক হাসহাসির দরকার নেই। ভয় পাবেন না। ক্ষমতা থেকে যদি চলেও যান, যারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করুন। আপনাদের দল ছাড়া অন্য বড় দলগুলো একেবারে আপনাদের মত অত নিষ্ঠুর নয়। দেখবেন, আলাপ করলে ক্ষমা করে দেবে। বিএনপি’র নেতৃত্ব সম্পর্কে একটু বয়ান দিয়ে শেষ করি। ক’বছর আগে, সম্ভবত ২০১৩ সালে মওদুদ আহমদ সাহেব লন্ডনে একটা রেস্টেুরেন্টে আইনজীবী ও বাংলা গণমাধ্যমের সাথে এক মত বিনিময় সভা করলেন। আমি তখন সাপ্তাহিক ইউরোবাংলায় কাজ করি। তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম তিনটি। সে তিন প্রশ্নের মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিলঃ ৭৫ সালে শেখ মুজিব কিলিং যারা জড়িত ছিল, ২০০১- ২০০৬ সময়ে আপনি আইনমন্ত্রী ছিলেন। সে বিচার সুরাহা করে আসেন নি কেন? তিনি যা বলেছিলেন, তাতে উপস্থিত সকল আইনজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীরা তাজ্জব বনে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, আমরা যদি রায় দিয়ে আসতাম, তাহলে কি আওয়ামি লিগ তা মেনে নিত? এ রকমই হল বিএনপি নেতাদের অনেকই। তিনি বুঝালেন, আওূয়ামী লীগের সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টি চিন্তায় রেখে তাাঁরা মন্ত্রণালয় বা সরকার চালিয়েছিলেন। জনগণ সেখানে ঐচ্ছিক বিষয়। অতএব, কোন ভয় নেই। বিএনপি নেতাদের অনেককেই এভাবে পাবেন । ভারত কতদিন আপনাদেরকে ভিটামিন টেবলেট খাইয়ে খাইয়ে টিকিয়ে রাখবে? বিভিন্ন সেক্টরে ও মন্ত্রণালয়ে একাধারে বর্ণ হিন্দু নিয়োগ দিয়েও কি পার পাওয়া যাবে? আল্লাহ চাইলে তাদের মনেও তিনি বিবেক বোধ জাগ্রত করে দিতে পারেন। দেশে সুশাসন দিন, জনগণই সমর্থন দিয়ে সরকার গঠন করতে দেবে। বাইরে বন্ধু দরকার। প্রভু নয়।